Summary
পৃথিবীর প্রায় সাতশ কোটি মানুষকে গ্রামীণ ও নগর শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। প্রাথমিকভাবে, মানুষ খাদ্য সংগ্রহ ও শিকারের উপর নির্ভরশীল ছিল এবং যাযাবর জীবন যাপন করত। খাদ্য সরবরাহের নিয়ন্ত্রণের পর, স্থায়ী বসতি বা গ্রাম গড়ে উঠতে শুরু করে।
বিভিন্ন নগরের উৎপত্তি মূলত অর্থনৈতিক কারণে ঘটে। প্রাচীন মিসরে নীল নদীর অববাহিকায় মেমফিস এবং সিন্ধু অঞ্চলে মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পাসহ অনেক নগর গড়ে উঠেছে, যা নগর সভ্যতার সূতিকাগার। রোম ছিল একসময় প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নগরী। তবে রোমের পতনের পর 'অন্ধকার যুগ' শুরু হয় এবং নগর প্রবৃদ্ধি স্তিমিত হয়।
অষ্টম শতাব্দী থেকে মুসলিম রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে নতুন নতুন শহর গড়ে উঠতে থাকে। ষোড়শ শতাব্দীর শেষাংশে, ইউরোপীয় বাণিজ্য ও উপনিবেশ বিস্তারের সময় মোম্বাসা, কলকাতা, ফিলাডেলফিয়া প্রভৃতি নগর গঠিত হয়। শিল্প বিপ্লবের পর নগরায়ণ নতুন গতি পায় এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে অধিকাংশ মানুষ নগরে বসবাস করবে।
নগরায়ণের দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়া হলো:
(1) গ্রামীণ এলাকা থেকে নগরে মানুষের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং
(2) নগরের সংস্কৃতির গ্রামীণ এলাকায় প্রভাব বিস্তার।
এই প্রক্রিয়াগুলোর ফলে গ্রামীণ ও নগর জনসংখ্যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য কমে যাবে।
নোট: নগরায়ন নিয়ে আলোচনা করতে দলবদ্ধভাবে পয়েন্ট ভিত্তিক খাতায় বা পোস্টার পেপারে লেখা आवश्यक।
কাজের প্রকৃতি ও বসতির ধরন অনুসারে পৃথিবীর প্রায় সাতশ কোটি মানুষকে গ্রামীণ ও নগর এ দুটো শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। মানুষ যখন তার খাদ্যের জন্য সংগ্রহ এবং শিকারের উপর নির্ভর করত, তখন মানুষ ছিল যাযাবরের মতো। কিন্তু যখন খাদ্য সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ খানিকটা তার আয়ত্তে এলো, তখন সে স্থিতিশীল জনগোষ্ঠীতে পরিণত হতে আরম্ভ করল। গড়ে উঠল স্থায়ী বসতি বা গ্রাম। অনেকের মতে নারায়ণ বিকাশের ধারাক্রম হচ্ছে- সংগ্রহ ও স্পিকার, কৃষি এবং নগরায়ণ ।
অনেকের ধারণা নগরের উৎপত্তি লগ্নে অর্থনৈতিক কারণগুলোই প্রাধান্য পেরেছিল। নীল নদের অববাহিকায় মেমফিস, খেবস (৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব), সিন্ধু অববাহিকায় মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা (২৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব) প্রভৃতি নগরের উৎপত্তি ঘটে। এগুলো নগর সভ্যতার সূতিকাগার। প্রাচীনকালে রোম ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী নগরী। রোমের পতনের কারণে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত নগর প্রবৃদ্ধির গতি স্তিমিত ছিল। ইতিহাসে এ সময়টি 'অন্ধকার যুগ' নামে খ্যাত। অষ্টম শতাব্দী থেকে মুসলমানদের রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরম্ভ করে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত নতুন নতুন শহর ও নগর গড়ে উঠতে থাকে। মুসলমানদের শাসন ইউরোপে স্পেন পর্যন্ত প্রসার লাভ করে এবং টলিডো, কর্ডোভা ও সেভিল শিক্ষা ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পাদপীঠে পরিণত হয় । ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয়গণ বাণিজ্য, বসতি, উপনিবেশ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে মোম্বাসা, দারুসসালাম, মালাক্কা, গোয়া, কলকাতা, সায়গন, জাকার্তা, বালটিমোর, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, কুইবেক, মন্ট্রিয়াল প্রভৃতি শহর ও নগর গড়ে ওঠে। শিল্প বিপ্লবের পর নগরায়ণে নতুন মাত্রা ও গতি পায়। কাঁচামাল হিসেবে কয়লা, লোহা, তামা ও অন্যান্য খনিজসামগ্রী উত্তোলনের কেন্দ্রগুলোতে গড়ে উঠল খনি শহর বা প্রাথমিক উৎপাদন কেন্দ্র। শিল্পকারখানাগুলোকে কেন্দ্ৰ করে গড়ে উঠল প্রস্তুতকারী শহর বা দ্বিতীয় পর্যায়ের উৎপাদন কেন্দ্র। উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন দেশে বিক্রি ও রপ্তানি করার জন্য গড়ে উঠল বাজার ও বন্দর বা তৃতীয় পর্যায়ের অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডভিত্তিক কেন্দ্রসমূহ (সেবাকেন্দ্র)। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ নগরায়ণের ফলে নগরে বসবাস করবে। নগরায়ণ দুটি সম্পর্কযুক্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত : (১) গ্রামীণ এলাকা থেকে পৌর এলাকায় মানুষের আগমন এবং এর ফলে গ্রামীণ এলাকা অপেক্ষা পৌর এলাকায় বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধি পাওয়া; (২) নগরের সঙ্গে জড়িত সংস্কৃতির কতিপয় ধরনসহ গ্রামীণ এলাকায় পৌর প্রভাবের বিস্তার এবং এই প্রভাব প্রসার লাভ করার ফলে অতিমাত্রায় নগরায়িত সমাজে গ্রামীণ ও পৌর জনসংখ্যার মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য হ্রাস পায়।
কাজ : নগরায়ণ কী? দলে আলোচনা করে পয়েন্টভিত্তিক খাতায়/পোস্টার পেপারে লেখ ।
Read more